Search This Blog

Friday, December 27, 2024

 

             

 

শুভ বিজয়া – অর্ধ শতাব্দীর এপার ওপার

 নন্দিনী বসু

আমার  spondilytis এর বোধহয় শুরু সেই যখন আমার ন’ বছর দু মাস পাঁচ দিন বয়স । বছরের সেই সময়ে বাড়িতে অগুনিত অতিথি আসতেন আমার ঠাকুমা দাদুকে বিজয়ার প্রনাম করতে আর ঠাকুমা প্রায় সারাদিন ধরেই ‘দুগ্গা দুগ্গা’ বলে সবাইকে বিদায় জানাতেন। সেই ‘দুগ্গা দুগ্গা’ র ঠ্যালায় বাড়িতে পোষা ময়না পাখিটাও বলতে শুরু করল ‘দুগ্গা দুগ্গা’ । শুধু একটাই ভুল করত ময়না পাখিটা – ঠাকুমার মত অতিথি দের যাবার সময় না বলে, সে অতিথি রা এলেই বলে দিত ‘দুগ্গা দুগ্গা’। কাজ সেরে রাখা আর কি ! যে যা মনে করে করুক ।

এই সমস্ত অতিথিরাই, বলাই বাহুল্য, আমার প্রবল গুরুজন ছিলেন। সারি বদ্ধ ভাবে বসা নানা ধরনের কাকা, কাকিমা, জেঠিমা, দিদা, দাদুদের প্রণাম করে চলেছি, অন্ধের মত প্রণাম করছি প্রায় – প্রচণ্ড  speed এ … শেষ করতে হবে তো ! করতে করতে খাটের পায়াটাকেও প্রায় প্রণাম করে ফেলি আর কি…উঃ…আর তারপর থেকেই spondilytis এর আদি বীজ আসে আমার শিরদাঁড়ায় ! যদিও কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই আমার এই সন্দেহের ।

বর্তমানে বিজয়া প্রথা সমাজে কতটা আছে – সেটা ভাল না খারাপ, এই সব বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। শুধু প্রায় হারিয়ে যাওয়া এক সামাজিক প্রথার কৌতুকপূর্ণ স্মৃতি রোমন্থন এই ছোট্ট পরিসরে ।

যাই হোক, ফিরে যাই আবার অর্ধ শতাব্দী আগে- সারি সারি প্রণাম সেরেই পালাবো ভাবি ঘর থেকে, কিন্তু পালাতে দিলে তো ! ততক্ষণে জাপটে ধরেছে আমায় কাকিমা, জেঠিমা , দিদাদের দলবল ।  মাথার চুল এলোমেলো করে, গাল টিপে গাল লাল করে, আশীর্বাদ করতে করতে, তাঁরা আমার মা কে ‘অবাক’ হয়ে বলতে থাকেন আমি ‘কত্ত’ বড় হয়ে গেছি । চেনাই যায় না! শুনে আমার অন্তর টা হু হু করে ওঠে -  বড় হয়েছি? কই, এখনও তো আলমারির মাথায় হাত পাই না! বড়রা যথেচ্ছ ভাবে আমার প্রিয় খেলনা পুতুল আলমারির মাথায় তুলে রাখেন (শাস্তি স্বরুপ) !

বিজয়া দশমীর সন্ধ্যাবেলা প্রতি বছর, রাত্তির ৯.৫০ বাজলেই, আমার পিসেমশাই এর একান্নবর্তী পরিবার থেকে, ঠিক এগারো জন সদস্য ঠাকুমা দাদুকে প্রণাম করতে আসতেন । পিসেমশাই, তাঁর ভাইয়েরা ও তাঁদের ছেলেরা ( সেই পরিবারের মহিলা কূল আসতেন পরে )। কেন অত রাত্তিরে তাঁরা আসতেন এবং প্রতি বছর একই সময়ে আসতেন, সেটা রহস্য ছিল । যদিও এই নিয়ে অনেক conspiracy theory ছিল বড়দের মহলে ।

এই নিশাচর অতিথিদের মদ্ধে, তিন জন doctorate, দু জন দু রকমের engineer, দু জন  ডাক্তার, এক জন barrister, ও বাকি তিন জন নানা স্তরের ছাত্র ছিলেন । এনাদেরও প্রচণ্ড স্পীড এ প্রণাম সারতে হতো । ওদিক থেকে মা চোখের ইশারা করছেন ওঁদের সঙ্গে বাড়ির বড়দেরও প্রণাম করার জন্য।

আমি এই দলটাকে খুব ভয় পেতাম কারণ এঁরা আমাকে খুব পড়া ধরতেন ! একজন হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা বল তো, কলকাতা শহরে কটা ট্রাম চলে প্রতিদিন?’ আমি ক্যাবলা হেসে, ঘুম চোখে তাকিয়ে থাকতাম দুলালের তাল মিছরির শিশিটার দিকে । আরেকজন জিজ্ঞেস করলেন  ‘ I don’t know র বাংলা কি হবে বল দেখি?’ আমি উত্তর টা বলতেই ‘ছিঃ ইংলিশ মিডিয়াম এ পড় আর এটা জানো না…’ বলেই খুব হাসতেন । ওই ডক্টরেট দের মধ্যে একজন পৃথিবীর সব রাজধানীর নাম জিজ্ঞেস করতেন । এই প্রশ্ন টা সহজ হত কারন এটা সিলেবাস এর মধ্যে !

এই যে অজস্র আত্মীয় পরিজনের আসা যাওয়া চলত বিজয়ার সময়ে, তার একটা বড় অংশ ছিল মিষ্টি খাওয়ানো । তখন গণ ডায়াবেটিস শুরু হয়নি । মানুষের মিষ্টত্ব তার ব্যাবহারে সীমাবদ্ধ ছিল, অসুখের মধ্যে নয়! তাই বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি ও নোনতা খাবারের স্টক থাকত । বিশেষ অতিথিরা এলে অবশ্য, রান্নার ঠাকুরকে ঠাকুমা হুকুম করতেন  স্পেশাল ‘মামলেট’ বানাতে । দাদুর ডায়াবেটিসও ক্ষমা ঘেন্না করে দিতেন আমার প্রবল ব্যাক্তিত্ত্বময়ী  ঠাকুমা এবং দাদুর দিনে একটা করে মিষ্টি বরাদ্দ করেছিলেন – অবশ্যই সেটা বিজয়ার মরশুম বলে ।

আত্মীয় স্বজনদের আসা টা আমরা বাড়ির ছোটরা খুব উপভোগ করতাম । অনেকের সঙ্গেই হয়ত বছরে শুধু একবারই দেখা হত । তখন মোবাইল ফোন ছিল না বলে, অনেক অজানা খবর জমত এক বছরে, যার গল্প গুলো প্রায় শেষই হতে চাইত না ।

মাঝে মাঝে একটু অস্বস্তিকর পরিস্থিতিও হয়েছে । যেমন ধরা যাক অমুক কাকা সপরিবারে এসেছেন । খুব হাসি গল্প হচ্ছে । সবে  জল ভরা তালশাঁস এ কামড় দিয়েছেন, ঠিক তখনই তমুক জ্যাঠামশাই এসে হাজির । এনাদের দুজনের সম্পর্ক খুবই তিক্ত । মুখ দেখা দেখি বন্ধ । বলাই বাহুল্য অমুক কাকারা তাড়াহুড়ো করে বিদায় নিলেন । আধ খাওয়া তালশাঁস টা প্লেটে হেঁসে কুটোপুটি ।

এরপর আমাদের যাবার পালাও থাকত প্রচুর । বাবা মা র সঙ্গে যেতে হত অনেকের বাড়ি । তখন বাড়ির ছোটদের এত পাত্তা দেওয়ার রেওয়াজ ছিল না । ছোটরা তখনও পরিবারে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক । তাই সব বাড়িতে গিয়ে বড়রা নিজেদের মধ্যে গল্প করতেন । যে সব বাড়িতে আমার সমবয়সী কেউ থাকতো না, সেখানে আমি চেয়ারে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে দেখতাম তাদের বই বা পোরসিলেন পুতুলের সম্ভার ।

সেই প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে, বাড়ির ছোটদের ইচ্ছে অনিচ্ছের গুরুত্ব ছিল না খুব একটা । দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হলে যা হয় । আগেকার প্রজন্মের বিরুদ্ধে সহিংস স্বাধীনতা সংগ্রাম তখনো শুরু  হয় নি । আমরা অহিংস গান্ধীবাদী ছিলাম । অর্থাৎ, বড়রা একটা গালে থাপ্পড় মারলে, আমরা আরেকটা গাল বাড়িয়ে দিতাম ।

যাই হোক , প্রাচীন ইতিহাস ছেড়ে ফিরে আসি, ২০২৪ অক্টোবর এ -  বিজয়ার মরশুমে । সোম কাকু ও কাকিমা এসেছেন তাঁদের ১১ বছরের নাতনি পমপম কে নিয়ে আমার মা কে প্রণাম করতে । অনেক বছরের বন্ধুত্ব তাঁদের আমার বাবা মা র সঙ্গে । মা ও খুব খুশি তাঁদের দেখে, পুরনো কথা বলার সুযোগ পেয়ে । মা এর খুব আক্ষেপ যে তাঁর প্রজন্মের মানুষরা এক এক করে চলে যাচ্ছেন । যাঁরা আছেন তাঁরাও অসুস্থ ।  গল্প করার লোক  কমে গেছে ।  তাই সোম কাকু ও কাকিমা আসাতে মা খুবই আনন্দিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তাঁদের ১১ বছরের নাতনি পমপম ই হয়ে উঠল পুরো visit এর মধ্যমণি ।

‘ পমপম খুব ভাল গান গায়’ , গর্বিত ভাবে বললেন কাকিমা আমার মা কে । ‘শুনিয়ে দাও তো সোনা ওই অকা অকা গান টা …আমি তো ওর দাদু কে বলি, কত গুণী নাতনি আমাদের – অকা অকা গান টা, ওই শাকিরা না কার যেন – আমাদের পম তো তখন জন্মায়েই নি …কি করে যে শিখল অত সুন্দর করে গান টা কে জানে!’  আমি মনে মনে ভাবি হায় রে! আমরা যারা রবীন্দ্রসঙ্গীত নজরুলগীতি শিখে বড় হয়েছি, আমরা কি রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল এর সময়ে জন্মেছিলাম নাকি ! ‘গাও সোনা একবার…’ বলে কাকিমা তাঁর গেঁটে বাত নিয়েই শাকিরার নাচের অঙ্গভঙ্গি করতে লাগলেন সোফায় বসে বসে…শুধুমাত্র নিরুত্তাপ নির্লিপ্ত পমপমকে গাইতে উদ্বুদ্ধ করতে । কিন্তু  পমপম নামক সেই সম্ভাবনাময়ী গায়িকা পুরোটাই নিমগ্ন রইল স্মার্ট ফোনের অতলে ।

এই সময়ে মায়েরও ফোন এল – কোন আত্মীয় যিনি আসতে পারবেন না । তাই ফোনেই সারা হল বিজয়ার টুকিটাকি । ইতিমধ্যে অতিথিদেরও যাবার সময় হয়ে এল । পমপমের ১৬ টা tuition এর মধ্যে আজ দুটো আছে । দাদু দিদারই নিয়ে যাওয়ার duty.

ওনাদের টা টা বাই বাই করতে করতে আমার হঠাৎ প্রবল ইচ্ছে হল পমপমকে একটু পড়া ধরি…না না…ট্রাম সম্পর্কে নয় ! ট্রামের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছুই তো হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে ।

                                                                                            নন্দিনী বসু

 

Thursday, December 26, 2024

HANDS

HANDS














 By Nandini Basu 

My hands look so much like my mother's, 
All dried up with veinous ravines.
 - a landscape of the desert. 
Who will say that this hand also 
Watered plants one day 
And had made the earth green. 

Will my daughter's hand also look like mine? 
The hand of fate is inescapable... 
Whose hand it is that meddles in my life 
Turning and twisting every course. 
Unseen remains its ravines and wrinkles 
Mother and Daughter together
Or even Sisters of Fate they are called. 

My daughter's hand is just like mine 
Smooth and yellow and strong. 
Each vein has a story to tell 
Each wrinkle can sing a song.